#প্রেমরোগ_৩

মনের ভিতর প্রেমের ভান্ডার থাকলেও আমার প্রেমের ভাগ্য খুবই খারাপ। রাশিতে মনে হয় একেবারে ‘নেগেটিভ’ কথাটা লেখা ছিল। সেই ছোটবেলা থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি পার হয়ে যাওয়া পর্যন্ত শুধু সেই প্রাইমারী স্কুলের কোএডুকেশন ছাড়া হাইস্কুল,কলেজ, ইউনিভার্সিটির ক্লাসে মেয়ে একদম ছিলই না বলা যায়।

যুদ্ধের সময় আমরা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। সেই যে গেলাম, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও গ্রামে রয়ে গিয়ে স্কুলে পড়াশুনা করছিলাম। ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন। ক্লাসে মনে হয় মাত্র দুই কি তিনটা মেয়ে ছিল। তার ভিতর একজনের নাম ছিল সাবিহা। মাথায় ঘোমটা দিয়ে ক্লাসে আসত।

সেই ঘোমটাওয়ালিকেই আমার অনেক ভাল লাগত। একবার তাকে দোকান থেকে পাঁচ পয়সা দামের বাতাসা কিনেও খাইয়েছিলাম। পুরো ক্লাসে আমিই একমাত্র শার্ট প্যান্ট পরে যাই। ঢাকার ছেলে আমি। বাকি সবাই লুংগি না হয় পায়জামা পরে খালি পায়ে ক্লাসে আসে। আর আমি সাদা কেডস পরে যাই। তাই সব ছেলেরা আমাকে হিংসা করত অল্প বিস্তর।

ক্লাসের দুষ্ট বালক আব্দুর রহমান খেয়াল করল, সাবিহার সাথে আমি পুটুর পুটুর করে কথা বলি। আব্দুর রহমান পড়াশোনায় চরম ফাঁকিবাজ। প্রতিদিন স্যারদের হাতে মার খায়। আর সেই মার হত অনেক অমানবিক। চিকন বেত দিয়ে মারতে মারতে মাটিতে শুইয়ে ফেলত ওকে। তারপরেও কুকুরের লেজের মত বাঁকা থাকাই ছিল ওর স্বভাব।

সেই ছেলে একদিন আমার কাছে এসে বলে –

তুই সাবিহা’র লগে পিরিত করনের ধান্দা করস। আঁই বুইজছি। অন তুন আঁরে তুই হইত্তেদিন বাতাসা কিনি খাওয়াইবি। নাইলে আঁই লুতু স্যারেরে বেজ্ঞিন কই দিমু। তারপর স্যার তোরে আঁর মতন হিডি হোতাই হালাইবো।

পড়াশোনায় খুব ভাল আমি। তার উপর পারিবারিক পরিচয়ের কারনে স্কুলের সব স্যারেরা আমাকে খুব আলাদা দৃষ্টিতে দেখে। স্নেহও করে। তবুও রহমানের কথায় ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ের চোটে তার মুখ বন্ধ রাখার জন্য সাবিহার পাশাপাশি রহমানকেও আমি বাতাসা কিনে খাওয়াতে লাগলাম।

শুধু ঐ বাতাসা খাওয়ানো পর্যন্তই। সাবিহাকে কোন দিন মনের কথা বলার সাহস হয় নাই। তারপর হটাত খেয়াল করলাম, সাবিহা আর ক্লাসে আসে না। কি হল, কাউকে জিগেস করতেও সাহস হয় না। খারাপ লাগছিল।

আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বাতাসা খাওয়া সেই রহমানই একদিন খবরটা জানালো ক্লাসে এসে। জানলাম,এই কম বয়সেই তার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। তাই পড়াশুনা বাদ।
অবাক হয়ে গেলাম জেনে। এত কম বয়সে আবার কারো বিয়ে হয় নাকি ? তারপর আর কোন দিন দেখা হয় নাই তার সাথে.

১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
চলবে……
#প্রেমরোগ_৪